শনিবার, ১৮ মে ২০২৪, ১০:৩২ অপরাহ্ন

নোটিশ :
সারাদেশ ব্যাপী সংবাদকর্মী নিয়োগ চলছে।। আগ্রহীরা যোগাযোগ করুন: 01717-055087, ইমেইল: priyobarta24tv@gmail.con
শিরোনাম :
নীলফামারীতে অটো চালককে গলা কেটে হত্যা, অটো ছিনতাই ফুলবাড়ীতে ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনী মিছিল ও পথসভা নীলফামারী জেলার কিশোরগঞ্জ উপজেলায় ৬ষ্ঠ ধাপে নির্বাচনে ঘোড়া মার্কার জয় জয়কার সড়ক দুর্ঘটনায় বিয়ে বাড়িতে শোকের ছোঁয়া ফুলবাড়ীতে নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে পালন হলো মে দিবস নলডাঙ্গা দোকান কর্মচারী শ্রমিক ইউনিয়নের উদ্যোগে র‍্যালি ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত সাঘাটায় আন্তর্জাতিক মে দিবস পালিত। গাজীপুরের পূবাইলে দুর্ধর্ষ ডাকাতি স্বর্নালংকারসহ নগদ অর্থ লুট গোবিন্দগঞ্জে তিন বন্ধু মিলে প্রেমিকাকে দলবদ্ধ ধর্ষণ। ঠাকুরগাঁওয়ে আদালতের নির্দেশ অমান্য করে নিয়োগ পরিক্ষা অনুষ্ঠিত

হার না মানা এক যুবকের বিস্ময়কর সফলতার গল্প

সকল প্রতিকূলতাকে কাটিয়ে নিজের স্বপ্নকে ছুঁয়েছে হার না মানা এক অদ্ভূত পরশ্রমী যুবক যাকে গ্রামে সবাই বাবুল নামেই চিনে। খুবই সাদামাটা জীবনে অভস্ত্য এই যুবকের ভিতরের গল্পটা কিন্তু সাদামাটা নয়। হ্যাঁ, আজকে আমরা আমাদের ধারাবাহিক প্রতিবেদনের অংশ হিসেবে এমন একজন যুবকের সাথে আপনাদের পরিচয় করিয়ে দিবো যিনি আপনার, আমার, সকলের অনুপ্রেরণার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।

রংপুর জেলার অন্তর্গত তারাগঞ্জ উপজেলার আওতাধীন হাড়িয়ারকুঠি ইউনিয়নের অন্তর্ভুক্ত কিসামত মেনানগর নুনাতিপাড়া নামক এক গ্রামে ১৯৯২ খ্রিস্টাব্দের ১৪ জানুয়ারি মোঃ এনামুল হক এক নিম্ম মধ্যবিত্ত কৃষক পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। বাবা মোঃ লিয়াকত আলী ও মাতা মোছাঃ আছিয়া বেগমের জ্যেষ্ঠ্য ও অনেক আদরের সন্তান ছিল এনামুল।  পরবর্তীতে ২০০০ সালে এনামুলের পরিবার চাঁন্দেরহাট নামক এক জায়গায় নতুনভাবে বসতি স্থাপন করে। ঐখানে, স্থানীয়রা ভালবেসে তাকে বাবুল নামেই ডাকে। চাঁন্দের পুকুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে প্রাথমিক শিক্ষা গ্রহণ করেন।  এরপর গ্রামের পাশেই অবস্থিত ডাংগীরহাট স্কুল ও কলেজ থেকে মানবিক বিভাগে এস.এস.সি ও এইচ.এস.সি সম্পন্ন করেন। তারপর অর্থনীতি বিভাগে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন। 

তিনি তার অতীত জীবনী সম্পর্কে জানতে চাইলে প্রিয়বার্তাকে জানায়, “আমার বাবা মোঃ লিয়াকত আলী ও মা মোছাঃ  আছিয়া বেগম। আমরা দুই ভাই ও দুই বোন। আমি পিতা-মাতার বড় সন্তান। ছোট বেলায় (প্রাথমিক) পড়াশোনায় খুব মনযোগী ছিলাম। তৃতীয় শ্রেণি থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত মেধায় আমার ২য় অবস্থানও ছিল। কিন্তু ষষ্ঠ শ্রেণিতে অজ্ঞাত কারণে পড়াশোনায় হঠাৎ মনোযোগ হাড়িয়ে ফেলি। কিন্তু সৃষ্টিকর্তার অশেষ রহমতে, পুনরায় অষ্টম শ্রেণিতে লেখাপড়ায় মনোনিবেশ করি। বৃত্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করলেও ফলাফল আশানূরুপ হয়নি। এরপর নবম শ্রেণিতে মানবিক বিভাগে ভর্তি হলাম। ফলাফল নিজের প্রত্যাশার কাছাকাছি না হলেও সেই সময় মানবিক বিভাগ থেকে যে কয়েকজন “এ গ্রেড” পেয়েছিল তাদের মধ্যে আমিও ছিলাম। উচ্চ মাধ্যমিকেও মানবিক বিভাগ থেকে “এ গ্রেড” পেয়ে ফলাফলের ধারাবাহিকতা রক্ষা হলো। মজার ব্যাপার হলো, ২০০৯ সালে উচ্চ মাধ্যমিকে ইংরেজি পরীক্ষা তুলনামূলক কঠিন হওয়ায় ভার্সিটি এডমিশন নিয়ে অনেক দুশ্চিন্তায় পড়ে গিয়েছিলাম। পরবর্তীতে আমার বন্ধু তপন এর সাথে অনেক চিন্তা-ভাবনা করে রংপুরে স্বনামধন্য ইউসিসি কোচিংয়ে ভর্তি হলাম।  কোচিং চলাকালীন অনেক ভার্সিটির ফরম তুললেও, ইংরেজিতে কাঙ্ক্ষিত ফলাফল না হওয়ায়, ভুলবশত ঢাবির ফরম তোলা হয়নি। এজন্য ঢাবিতে পড়ার স্বপ্নও পূরণ হয়নি। যদিও পরবর্তীতে জানতে পেরেছিলাম যে, আমার ধারণা ভুল ছিল। ঢাবিতে পরীক্ষা দেয়ার মত যথেষ্ট নম্বর আমার ইংরেজি বিষয়ে ছিল। তারপর অর্থনীতি বিভাগে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ হলো।  অর্থনীতি নিয়ে পড়ার ইচ্ছা অনেক আগে থেকেই ছিল। যা এবার পূরণ হলো। কৃষক বাবার পাঠানো অর্থ পর্যাপ্ত না হওয়ায়, নিজের লেখাপড়ার পাশাপাশি আমি অন্যের বাসায় টিউশনি করিয়েছি। অতপরঃ অর্থনীতি বিভাগে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করে, নিজের স্বপ্ন পূরণের আশায় স্বপ্নের শহর ঢাকায় পাড়ি জমালাম। চাকরি নামক যুদ্ধে অনেক চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে ঢাকায় আড়াই বছর অতিক্রান্ত হওয়ার পর একইসাথে পর পর দুটি চাকুরিরি যোগদানপত্র পাই। এখানে একটা কথা বলা বাহুল্য যে, আমার যখন চাকুরি হয়নি, তখন এলাকাবাসী এবং বন্ধু-বান্ধবসহ বহু মানুষের কটুক্তি শুনেছি, বিদ্রুপ শুনেছি। কিন্তু আমি হার মানিনি। আমি এসব কথায় কখনও হতাশাবোধ অনুভব করিনি। বরং, আগের চেয়ে আরো দৃঢ়প্রত্যয়ী হয়েছি। স্বপ্ন ছিলো ব্যাংকার হওয়ার।  সোনালী ব্যাংকে অফিসার হিসেবে সুপারিশ প্রাপ্তও হয়েছিলাম। কিন্তু তা আর হলো না।তার আগেই আমি স্থানীয় সরকার বিভাগ, বাংলাদেশ সচিবালয়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তা হিসেবে যোগদান করেছি। বর্তমানে এটাই আমার কর্মস্থল। ” 

এত লেখাপড়া, এত ভাল চাকুরি থাকা সত্ত্বেও তিনি তার অতীত ও শিকড়কে ভুলে যায়নি। গ্রামে অবস্থানকালে এখনও তিনি তার কৃষক পিতাকে  কৃষি কাজে সহযোগিতা করে।  তিনি ভুলে যাননি যে তার কৃষক পিতার হাড় ভাঙ্গা অক্লান্ত পরিশ্রম আর তাকে উচ্চ শিক্ষিত করার দুর্লভ প্রয়াস আজকে তাকে তার এই বর্তমান অবস্থানে নিয়ে এসেছে।  তিনি বলেছেন, “আমার বাবা পড়তেও পারে না, লিখতেও পারে না। তা সত্ত্বেও তিনি তার ৪ সন্তানকে লেখাপড়া শিখিয়েছেন। মানুষের মত মানুষ বানিয়েছেন।” তিনি আরও বলেছেন, “আমার মা, বাবার মতই অক্লান্ত পরিশ্রম করেছে। আমি যতক্ষণ রাত জেগে বই পড়েছিলাম মা, ততক্ষনই রাত জেগেছিল। বাবা এবং মায়ের এই অক্লান্ত পরিশ্রম, ত্যাগ ও প্রচেষ্টা আমার আজকে এই সফলতার মূল অনুপ্রেরণা।”

“এনামুল হকের এক অন্তরঙ্গ বন্ধু তপনের কাছ থেকে প্রিয়বার্তা এনামুল হক সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “এনামুল আমার খুব কাছের একজন বন্ধু৷ আমরা একসাথেই লেখাপড়া করেছি। ঢাকায় আমরা একসাথে দুই বছর কাটিয়েছি। আমার দেখা অভিজ্ঞতা মতে, সে একজন ভীষণ মাপের পরিশ্রমী ব্যাক্তি যা আমি ভাষায় প্রকাশ করতে পারবো না৷ সে একটি মুহূর্তও অপচয় করেনি। অনেক রুটিনমাফিক জীবন তার। সব সময় হাসৌজ্জ্বল থাকতে ভালবাসে৷ অনেক সাদামাটাভাবে চলে। কখনও কোন খারাপসঙ্গ ছিল না তার। সব সময় স্বপ্ন পূরণে দৃঢ় প্রত্যয়ী। নিজের সাধ, আহ্লাদ সব ত্যাগ করে সে পুরোটা সময় জ্ঞানসাধনা করেছে। একটা কথা না বললেই নয়, আমি এক ঈদে তাকে গ্রামের বাড়িতে আসতে দেখিনি। আমি ফোন করে তাকে তার না আসার কারণ জানতে চাইলে সে জানায়, ঈদের আনন্দের চেয়েও ঢাকায় থেকে সেই সময়টুকু লেখাপড়ায় কাজে লাগিয়ে আমার বাবা-মায়ের স্বপ্ন পূরণ করা আমার কাছে অধিক আনন্দের। অসুস্থ ছিল, তারপরও ঢাকায় থেকে চাকুরির প্রস্তুতি নিয়েছে। সে অনেক ত্যাগ করেছে। এখন গ্রামবাসী এবং এলাকার মানুষের বহু উন্নয়নমূলক কাজে সহযোগিতা করছে যা আজকাল আমরা অনেক সফল ব্যক্তির কাছ থেকেই দেখতে পাইনা। আমি তার জীবনের সর্বাঙ্গীণ সফলতা কামনা করি।” এলাকাবাসীর সাথে কথা বললে তারা জানায়, “আমরা এনামুলের এই সফলতার জন্য অনেক গর্বিত।” স্কুলের শিক্ষকবৃন্দ এবং অধ্যক্ষ মোঃ রফিকুল ইসলামের সাথে কথা বললে তাঁরাও জানায়, “এনামুল অনেক মেধাবী ছাত্র ছিল। সে ডাংগীরহাট উচ্চ বিদ্যালয় ও মহাবিদ্যালয়ের সুনাম অনেকগুণ বৃদ্ধি করেছে। আমরা তার উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ কামনা করি।”

মোঃ এনামুল হক সকলের জন্য একটি প্রিয় বার্তা দিয়েছেন, “সবশেষে, সকলের জন্য আমার একটিই বার্তা থাকবে যে, নিজের স্বপ্নের সাথে লেগে থাকুন, সফলতা একদিন আসবেই। আর হ্যাঁ, আমার জন্য সবাই দোয়া ও আশীর্বাদ করবেন।”

সংবাদটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © 2017 Priyobarta24.Com
Design & Developed BY Hostitbd.Com